Subscribe Our Channel

বাংলা ব্যাকরণ | সমাস

সমাস হচ্ছে দুই বা ততোধিক পদের একপদীকরণ। যেমনঃ সু (শোভন) ব্রত যাহার = সুব্রত।

অর্থবাচকতা

সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপ, সমর্থন, সংগ্রহ, মিলন।

প্রকারভেদ

সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ দ্বন্দ্ব, বহুব্রীহি, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, দ্বিগু এবং অব্যয়ীভাব।

দ্বন্দ্ব সমাস

যে সমাসে সমস্যমান প্রত্যেক পদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমনঃ রূপ ও রস ও গন্ধ ও শব্দ ও স্পর্শ = রূপরসগন্ধশব্দস্পর্শ; অন্ন ও বস্ত্র = অন্নবস্ত্র।

বহুব্রীহি সমাস

যে সমাসে মূখ্যভাবে সমস্যবান পদসমূহের অর্থপ্রতীতি না হয়ে অন্য পদের অর্থ মূখ্যরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যথাঃ পীত হইয়াছে অম্বর যাহার = পীতাম্বর (অর্থ শ্রীকৃষ্ণ)। এর ব্যাসবাক্যে একটি যদ্ শব্দের প্রয়োগ থাকে।

কর্মধারয় সমাস

বিশেষ্যের সাথে বিশেষণের সমাসকে কর্মধারয় সমাস বলে। যথাঃ নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। কর্মধারয় সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রধানভাবে থাকে।

কর্মধারয় সমাস প্রধানতঃ চার প্রকার। যথাঃ-

মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসঃ কর্মধারয় সমাসে কোন কোন স্থানে মধ্যপদের লোপ হয়। সেজন্যেই একে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যথাঃ হিমালয় নামক পবর্ত = হিমালয়পবর্ত। এখানে ‘নামক’ মধ্যপদের লোপ হয়েছে।

উপমিত কর্মধারয় সমাসঃ সমান ধর্মবাচক পদের প্রয়োগ না থাকলে উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমনঃ মুখ চন্দ্রসদৃশ = মুখচন্দ্র।

রূপক কর্মধারয় সমাসঃ উপমেয় পদে উপমানের আরোপ করে যে সমাস হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এতে উপমেয় পদে রূপ শব্দের যোগ থাকে। যেমনঃ বিদ্যারূপ ধন = বিদ্যাধন। এখানে ‘রূপ’ শব্দের যোগ রয়েছে।

উপমান কর্মধারয় সমাসঃ উপমানবাচক পদের সাথে সমান ধর্মবাচক পদের মিলনে যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যেমনঃ শশের (খরগোশের) ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।

তৎপুরুষ সমাস

দ্বিতীয়াদি বিভক্তান্ত পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। এতে উত্তরপদের অর্থ প্রধানভাবে থাকে। যেমনঃ লবণ দ্বারা অক্ত (যুক্ত) = লবণাক্ত।

তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ-

দ্বিতীয়া-তৎপুরুষঃ দ্বিতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ স্বর্গকে গত = স্বর্গগত।

তৃতীয়া-তৎপুরুষঃ তৃতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে তৃতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ রজ্জু দ্বারা বন্ধ = রজ্জুবন্ধ।

চতুর্থী-তৎপুরুষঃ চতুর্থী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে চতুর্থী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ যজ্ঞের নিমিত্ত ভূমি = যজ্ঞভূমি।

পঞ্চমী-তৎপুরুষঃ পঞ্চমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে পঞ্চমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ মুখ হইতে ভ্রষ্ট = মুখভ্রষ্ট।

ষষ্ঠী-তৎপুরুষঃ ষষ্ঠী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে ষষ্ঠী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দীনের বন্ধু = দীনবন্ধু।

সপ্তমী-তৎপুরুষঃ সপ্তমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে সপ্তমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দিবাতে নিদ্রা = দিবানিদ্রা।

এছাড়াও, নঞ্ অব্যয় পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে নঞ্তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ ন উক্ত = অনুক্ত।

দ্বিগু সমাস

তদ্ধিতার্থে, উত্তরপদ পরে ও সমাহার বুঝালে সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। তদ্ধিতার্থে, যথাঃ পঞ্চ (পাঁচটি) গো দ্বারা ক্রীত = পঞ্চগু। উত্তরপদ পরে, যথাঃ পঞ্চ হস্ত প্রমাণ ইহার = পঞ্চহস্তপ্রমাণ। [এখানে প্রমাণ শব্দ উত্তরপদ পরে থাকায় পঞ্চ ও হস্ত এই দুই পদের দ্বিগু সমাস হয়েছে]। সমাহারে, যথাঃ ত্রি (তিন) লোকের সমাহার = ত্রিলোকী।

অব্যয়ীভাব সমাস

অব্যয় পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয় এবং যাতে পূর্ব পদের অর্থেরই প্রাধান্য থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমনঃ আত্মাকে অধি (অধিকার করিয়া) = অধ্যাত্ম।

অন্যান্য সমাস

নিত্য সমাসঃ যে সমাসে সমস্যমান পদ দ্বারা সমাস-বাক্য হয় না, অন্য পদের দ্বারা সমস্ত পদের অর্থ প্রকাশ করতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমনঃ অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর।

উপপদ সমাসঃ কৃদন্ত-পদের পূর্বে যে পদ থাকে, তাকে উপপদ বলে এবং উপপদের সাথে কৃদন্ত-পদের যে সমাস হয়, তাকে উপপদ সমাস বলে। যেমনঃ কুম্ভ করে যে = কুম্ভকার।

প্রাদি সমাসঃ প্র, পরা প্রভৃতি ২০টি উপসর্গের সাথে তৎপুরুষ সমাস হলে, তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমনঃ সম্ (সম্যক্) যে আদর = সমাদর।

দ্বন্দ্ব সমাস

যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ- উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এই সমাসে ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ স্থাপনে ও, এবং, আর- এই তিনটি অব্যয় ব্যবহৃত হয়।

যেমন- মা ও বাপ = মা-বাপ। এখানে পূর্বপদ ‘মা’ ও পরপদ ‘বাপ’। ব্যাসবাক্যে ‘মা’ ও ‘বাপ’ দুইজনকেই সমান প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, এবং দুজনকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, পূর্বপদ ও পরপদ, উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি দ্বন্দ্ব সমাস।

কর্মধারয় সমাস

কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। মূলত, এই সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদ পূর্বপদ ও বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদ পরপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর ব্যাসবাক্যটিতে ঐ বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদটি সম্পর্কে কিছু বলা হয়। অর্থাৎ পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়।

যেমন- নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম। এখানে, পূর্বপদ ‘নীল’ বিশেষণ ও পরপদ ‘পদ্ম’ বিশেষ্য। ব্যাসবাক্যে ‘পদ্ম’ সম্পর্কে বলা হয়েছে পদ্মটি ‘নীল’ রঙের। অর্থাৎ, ‘পদ্ম’ বা পরপদের অর্থই এখানে প্রধান, পরপদ ছাড়া পূর্বপদের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই এটি কর্মধারয় সমাস।

কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি বিশেষ নিয়ম-

দুইটি বিশেষণ একই বিশেষ্য বোঝালে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর। এখানে পরবর্তী বিশেষ্যটি অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে এটি দ্বন্দ্ব সমাস হবে না।

দুইটি বিশেষ্য একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে সেটিও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যিনি জজ তিনি সাহেব = জজসাহেব। একই কারণে এটি দ্বন্দ্ব না কর্মধারয় হবে।

কার্যে পরপম্পরা বোঝাতে দুটি কৃদন্ত বিশেষণ বা ক্রিয়াবাচক বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা। এখানে ‘মোছা’ কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে তা পুরুষবাচক হয়ে যাবে। যেমন, সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা

বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে মহা হয়। মহৎ যে জ্ঞান = মহাজ্ঞান

পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু’, ‘কৎ’ হয়। যেমন, কু যে অর্থ = কদর্থ।

পরপদে ‘রাজা’ থাকলে ‘রাজ’ হয়। যেমন, মহান যে রাজা = মহারাজ।

বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষ্য আগে এসে বিশেষণ পরে চলে যায়। যেমন, সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ।

কর্মধারয় সমাস মূলত ৪ প্রকার-

মধ্যপদলোপী কর্মধারয়: যে কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদগুলো লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন, ‘স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ = স্মৃতিসৌধ’। এখানে ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদ ‘রক্ষার্থে’ লোপ পেয়েছে। পূর্বপদ ‘স্মৃতি’ এখানে বিশেষণ ভাব বোঝাচ্ছে। আর ‘সৌধ’ বিশেষ্য। এটিরই অর্থ প্রধান। সুতরাং এটি মধ্যপদলোপী কর্মধারয়।

(উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাস আলাদা করে চেনার আগে কতোগুলো সংজ্ঞা/ টার্মস জানা জরুরি। সেগুলো হলো- উপমান, উপমেয় ও সাধারণ ধর্ম। কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর সঙ্গে তুলনা করা হলে যাকে তুলনা করা হলো, তাকে বলা হয় উপমেয়। আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান। আর উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম। যেমন, ‘অরুণের ন্যায় রাঙা প্রভাত’। এখানে ‘প্রভাত’কে ‘অরুণ’র মতো ‘রাঙা’ বলে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘প্রভাত’ উপমেয়। উপমান হলো ‘অরুণ’। আর প্রভাত আর অরুণের সাধারণ ধর্ম হলো ‘রাঙা’।)

উপমান কর্মধারয় সমাস: সাধারণ ধর্মবাচক পদের সঙ্গে উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। অর্থাৎ, উপমান ও উপমেয় কর্মধারয়ের মধ্যে যেটিতে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকবে, সেটিই উপমান কর্মধারয়। যেমন, তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র। এখানে ‘তুষার’র সঙ্গে কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে তুলনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটি উপমান। আর সাধারণ ধর্ম হলো ‘শুভ্র’। উপমেয় এখানে নেই। সুতরাং, এটি উপমান কর্মধারয় সমাস।

উপমিত কর্মধারয় সমাস: উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। এই সমাসে সাধারণ ধর্ম উল্লেখ করা থাকে না। অর্থাৎ, উপমান ও উপমিত কর্মধারয়ের মধ্যে যেটিতে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকবে না, সেটিই উপমিত কর্মধারয় সমাস। যেমন, ‘পুরুষ সিংহের ন্যায় = পুরুষসিংহ’। এখানে ‘পুরুষ’কে ‘সিংহ’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে ‘পুরুষ’ উপমেয় আর ‘সিংহ’ উপমান। সাধারণ ধর্মের উল্লেখ নেই। সুতরাং, এটি উপমিত কর্মধারয় সমাস।

রূপক কর্মধারয় সমাস: উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এটির ব্যাসবাক্যে উপমেয় ও উপমান পদের মাঝে ‘রূপ’ শব্দটি অথবা ‘ই’ শব্দাংশটি ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘মন রূপ মাঝি = মনমাঝি’। এখানে ‘মন’ উপমেয় ও ‘মাঝি’ উপমান। কিন্তু এখানে তাদের কোন নির্দিষ্ট গুণের তুলনা করা হয়নি। মনকেই মাঝি হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে।

বহুব্রীহি সমাস

যে সমাসে পূর্বপদ বা পরপদ কোনটিরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয় না, বরং সমস্ত পদ তৃতীয় কোন শব্দকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন, মহান আত্মা যার = মহাত্মা। এখানে পূর্বপদ ‘মহান’ (মহা) ও পরপদ ‘আত্মা’। কিন্তু সমস্ত পদ ‘মহাত্মা’ দ্বারা মহান বা আত্মা কোনটাকেই না বুঝিয়ে এমন একজনকে বোঝাচ্ছে, যিনি মহান, যার আত্মা বা হৃদয় মহৎ। আবার, মহাত্মা বলতে মহাত্মা গান্ধীকেও বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু কোন অর্থেই পূর্বপদ বা পরপদকে বোঝানো হচ্ছে না। অর্থাৎ, পূর্বপদ বা পরপদ, কোনটারই অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে না। সুতরাং, এটি বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ।

(উল্লেখ্য, বহুব্রীহি সমাস, বিশেষ করে কিছু ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস ও উপপদ তৎপুরুষ সমাসের সমস্ত পদ প্রায় একই ধরনের হয়। ফলে এদের সমস্ত পদ দেখে আলাদা করে চেনার তেমন কোন উপায় নেই। এগুলোর সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তাই একই ব্যাসবাক্য ও সমাস নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর পরীক্ষায় মূলত এগুলো উপপদ তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ হিসেবেই আসে।)

দ্বিগু সমাস

দ্বিগু সমাসের সঙ্গে কর্মধারয় সমাসের বেশ মিল রয়েছে। এজন্য একে অনেকেই কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। দ্বিগু সমাসেও পরপদের অর্থই প্রধান। এবং এই সমাসেও বিশেষণ পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের সমাস হয়। তবে এখানে বিশেষণ পদটি সর্বদাই সংখ্যাবাচক হয়, এবং সমাস হয় সমাহার বা মিলন অর্থে।

অর্থাৎ, সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন, ‘অষ্ট ধাতুর সমাহার = অষ্টধাতু’। এখানে পূর্বপদ ‘অষ্ট’ একটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ। আর পরপদ ‘ধাতু’ বিশেষ্য। অষ্ট ধাতুর মিলন বা সমাহার অর্থে সমাস হয়ে ‘অষ্টধাতু’ সমস্ত পদটি তৈরি হয়েছে যাতে ‘ধাতু’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, পরপদের অর্থ প্রধান হিসেবে দেখা দিয়েছে। সুতরাং, এটি দ্বিগু সমাস।

অব্যয়ীভাব সমাস

সমাসের পূর্বপদ হিসেবে যদি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়, এবং সেই অব্যয়ের অর্থই প্রধান হয়, তবে সেই সমাসকে বলা হয় অব্যয়ীভাব সমাস। যেমন, ‘মরণ পর্যন্ত = আমরণ’। এখানে পূর্বপদ হিসেবে পর্যন্ত অর্থে ‘আ’ উপসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে। আর পরপদ ‘মরণ’। কিন্তু এখানে সমস্ত পদটিকে নতুন অর্থ দিয়েছে ‘আ’ উপসর্গটি। অর্থাৎ, এখানে ‘আ’ উপসর্গ বা অব্যয় বা পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে। তাই এটি অব্যয়ীভাব সমাস। (উপসর্গ এক ধরনের অব্যয়সূচক শব্দাংশ। উপসর্গ বচন বা লিঙ্গ ভেদে পরিবর্তিত হয় না কিংবা বাক্যের অন্য কোন পদের পরিবর্তনেও এর কোন পরিবর্তন হয় না। এরকম আরেকটি অব্যয়সূচক শব্দাংশ হলো অনুসর্গ।)

তৎপুরুষ সমাস

যে সমাসে পূর্বপদের শেষের বিভক্তি লোপ পায়, এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। পূর্বপদের যে বিভক্তি লোপ পায়, সেই বিভক্তি অনুযায়ী তৎপুরুষ সমাসের নামকরণ করা হয়। তবে মাঝে মাঝে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে অবিকৃত থেকে যায়। তখন সেটাকে বলা হয় অলুক তৎপুরুষ। (অলুক মানে লোপ না পাওয়া, অ-লোপ)।

যেমন, দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত। এখানে পূর্বপদ ‘দুঃখ’র সঙ্গে থাকা দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘কে’ লোপ পেয়েছে। আবার পরপদ ‘প্রাপ্ত’র অর্থই এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখ প্রাপ্ত হয়েছে বলেই নতুন শব্দের প্রয়োজন হয়েছে, যার জন্য বাক্যাংশটিকে সমাস করে নতুন শব্দ বানানো হয়েছে। অর্থাৎ, এখানে পূর্বপদের শেষের বিভক্তি লোপ পেয়েছে, এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি তৎপুরুষ সমাস।

নিত্য সমাস

যে সমাসের সমস্ত পদই ব্যাসবাক্যের কাজ করে, আলাদা করে ব্যাসবাক্য তৈরি করতে হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন, অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর। এখানে ‘অন্য গ্রাম’ আর ‘গ্রামান্তর’, এই বাক্যাংশ ও শব্দটির মধ্যে তেমন বিশেষকোন পার্থক্য নেই। কেবল ‘অন্য’ পদের বদলে ‘অন্তর’ পদটি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এটি নিত্য সমাস।

প্রাদি সমাস

প্র, প্রতি, অনু, পরি, ইত্যাদি অব্যয় বা উপসর্গের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য বা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যর সমাস হলে তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন, প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন। এখানে বচন সমস্যমান পদটি একটি বিশেষ্য, যার মূল (ধাতু)বচ ধাতু বা কৃৎ প্রত্যয়। ‘প্র’ অব্যয়ের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য ‘বচন’র সমাস হয়ে সমস্ত পদ ‘প্রবচন’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। সুতরাং, এটি প্রাদি সমাস।

সমাস অনুশীলন

শকুন্তলা

শব্দব্যাসবাক্যসমাসের নাম

বনমধ্যেবনের মধ্যেষষ্ঠী তৎপুরুষ

প্রাণভয়প্রাণ যাওয়ার ভয়মধ্যপদলোপী কর্মধারয়

রথারোহণরথে আরোহণসপ্তমী তৎপুরুষ

রথচালনরথকে চালনদ্বিতীয় তৎপুরুষ

শরনিক্ষেপশরকে নিক্ষেপদ্বিতীয় তৎপুরুষ

শরের নিক্ষেপষষ্ঠী তৎপুরুষ

প্রাণবধপ্রাণের বধষষ্ঠী তৎপুরুষ

অতিমাত্রমাত্রাকে অতিক্রান্তপ্রাদি

বেগসংবরণবেগকে সংবরণদ্বিতীয়া তৎপুরুষ

বজ্রসমবজ্রের সমষষ্ঠী তৎপুরুষ

ক্ষীণজীবীক্ষীণভাবে বাঁচে যেউপপদ তৎপুরুষ

অল্পপ্রাণঅল্পপ্রাণ যারবহুব্রীহি

পুত্রলাভপুত্রকে লাভদ্বিতীয়া তৎপুরুষ

কার্যক্ষতিকার্যরে ক্ষতিষষ্ঠী তৎপুরুষ

অতিথি সৎকারঅতিথির সৎকারষষ্ঠী তৎপুরুষ

ধর্মকার্যধর্মবিহিত কার্যমধ্যপদলোপী কর্মধারয়

ভুজবলভুজের বলষষ্ঠী তৎপুরুষ

ভারার্পণভারের অর্পণষষ্ঠী তৎপুরুষ

তপোবনতপের নিমিত্ত বনচতুর্থী তৎপুরুষ

তপোবনদর্শনতপোবনকে দর্শনদ্বিতীয়া তৎপুরুষ

কোটরস্থিতকোটরে স্থিতসপ্তমী তৎপুরুষ

মুখভ্রষ্টমুখ থেকে ভ্রষ্টপঞ্চমী তৎপুরুষ

উপলখণ্ডউপলের খণ্ডষষ্ঠী তৎপুরুষ

বিস্ময়াপন্নবিস্ময়কে আপন্নদ্বিতীয়া তৎপুরুষ

কর্ণকুহরকর্ণের কুহরষষ্ঠী তৎপুরুষ

তপস্বিকন্যাতপস্বীর কন্যাষষ্ঠী তৎপুরুষ

অনতিবৃহৎনয় অতি বৃহৎনঞ তৎপুরুষ

সেচনকলসসেচনের নিমিত্ত কলসচতুর্থী তৎপুরুষ

জলসেচনজলদ্বারা সেচনতৃতীয়া তৎপুরুষ

অনসূয়ানেই অসূয়া (ঈর্ষা) যারবহুব্রীহি

প্রিয়ংবদাপ্রিয়ম্ (প্রিয়বাক্য) বলে যে (স্ত্রী) উপপদ

কণ্বতনয়াকণ্বের তনয়াষষ্ঠী তৎপুরুষ

মনোহারিণীমন হরণ করে যে নারীউপপদ তৎপুরুষ

স্বভাবসিদ্ধস্বভাব দ্বারা সিদ্ধতৃতীয়া তৎপুরুষ

অঙ্গুলি সংকেতঅঙ্গুলি দ্বারা সংকেততৃতীয়া তৎপুরুষ

নবযৌবননব যে যৌবনকর্মধারয়

যৌবনের গান

শব্দব্যাসবাক্যসমাসের নাম

মমতারসমমতা মিশ্রিত রসমধ্যপদলোপী কর্মধারয়

অলসতন্দ্রাঅলস যে তন্দ্রাকর্মধারয়

মোহনিদ্রামোহ রূপ নিদ্রারূপক কর্মধারয়

সৈন্যসামন্তসৈন্য ও সামন্তদ্বন্দ্ব

সংগীতগুঞ্জনসংগীতের গুঞ্জনষষ্ঠী তৎপুরুষ

ঝরনাধারাঝরনার ধারাষষ্ঠী তৎপুরুষ

জবাকুসুমসঙ্কাশজবাকুসুমের সঙ্কাশষষ্ঠী তৎপুরুষ

তিমিরবিদারীতিমিরকে বিদীর্ণ করে যা কর্মধারয়

যৌবনসূর্যযৌবন রূপ সূর্যরূপক কর্মধারয়

তিমিরকুন্তলাতিমিরের ন্যায় কুন্তল যার উপমিত কর্মধারয়

পাষাণস্তুপপাষাণের স্তুপষষ্ঠী তৎপুরুষ

আলোকপিয়াসীআলোকের পিয়াসীষষ্ঠী তৎপুরুষ

প্রাণচঞ্চলপ্রাণ চঞ্চল যারবহুব্রীহি

মেঘলুপ্তমেঘে লুপ্তসপ্তমী তৎপুরুষ

জয়মুকুটজয়ের জন্য যে মুকুটমধ্যপদলোপী কর্মধারয়

মার্তণ্ডপ্রায়মার্তণ্ডের প্রায়ষষ্ঠী তৎপুরুষ

নবপৃথিবীনব যে পৃথিবীকর্মধারয়

সলিলসমাধিসলিলে সমাধিসপ্তমী তৎপুরুষ

একটি তুলসী গাছের কাহিনী

শব্দব্যাসবাক্যসমাসের নাম

গল্পপ্রেমিকগল্প প্রেমিক যেকর্মধারয়

পুষ্পসৌরভপুষ্পের সৌরভষষ্ঠী তৎপুরুষ

জ্যোৎস্নারাতজ্যোৎস্না শোভিত রাত মধ্যপদলোপী কর্মধারয়

পৃষ্ঠপ্রদর্শনপৃষ্ঠকে প্রদর্শনদ্বিতীয়া তৎপুরুষ

দেশভঙ্গদেশকে ভঙ্গদ্বিতীয়া তৎপুরুষ

জনমানবজন ও মানবদ্বন্দ্ব

দেশপলাতকদেশ থেকে পলাতকপঞ্চমী তৎপুরুষ

আম-কুড়ানোআমকে কুড়ানোদ্বিতীয়া তৎপুরুষ

অনাশ্রিতনয় আশ্রিত যেবহুব্রীহি

সমবেদনা-ভরাসমবেদনা দিয়ে ভরাতৃতীয়া তৎপুরুষ

মন্দভাগ্যমন্দ যে ভাগ্যকর্মধারয়

মন্দ ভাগ্য যারবহুব্রীহি

ন্যায়সঙ্গতন্যায় দ্বারা সঙ্গততৃতীয়া তৎপুরুষ

জীবনসঞ্চারজীবনের সঞ্চারষষ্ঠী তৎপুরুষ

আবর্জনা-ভরাআবর্জনা দ্বারা ভরাতৃতীয়া তৎপুরুষ

গানের আসরগানের আসরঅলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ

রান্নাঘররান্না করা ঘরমধ্যপদলোপী কর্মধারয়

রান্নার নিমিত্ত ঘরচতুর্থী তৎপুরুষ

বেওয়ারিশবে (নেই) ওয়ারিশ যারনঞর্থক বহুব্রীহি

সন্ধ্যাপ্রদীপসন্ধ্যার প্রদীপষষ্ঠী তৎপুরুষ

জীবনপ্রদীপজীবন রূপ প্রদীপরূপক কর্মধারয়

সুখসময়সুখের সময়ষষ্ঠী তৎপুরুষ

গৃহকর্ত্রীগৃহের কর্ত্রীষষ্ঠী তৎপুরুষ

বাকবিতণ্ডাবাক দ্বারা বিতণ্ডাতৃতীয়া তৎপুরুষ

অত্যাচার অবিচারঅত্যাচার ও অবিচারদ্বন্দ্ব

শ্বাস-প্রশ্বাসশ্বাস ও প্রশ্বাসদ্বন্দ্ব

কচুকাটাকচুর মত কাটাউপমান কর্মধারয়

অক্ষতনয় ক্ষতনঞ তৎপুরুষ

অবিশ্বাস্যনয় বিশ্বাস্যনঞ তৎপুরুষ

বেআইনিবে (নয়) আইনিনঞ তৎপুরুষ

অপর্যাপ্তনয় পর্যাপ্তনঞ তৎপুরুষ

যৌবনের গান

শব্দব্যাসবাক্যসমাসের নাম

শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিনশ্রম-কিণাঙ্কের ন্যায় কঠিন উপমান কর্মধারয়

বন্য-শ্বাপদ-সঙ্কুলবন্য-শ্বাপদে সঙ্কুলসপ্তমী তৎপুরুষ

জরা-মৃত্যু-ভীষণাজরা-মৃত্যুতে ভীষণাসপ্তমী তৎপুরুষ

ধরণী-মেরীধরনী রূপ মেরীরূপক কর্মধারয়

খেয়াল-খুশিখেয়াল ও খুশিদ্বন্দ্ব

জীবন-আবেগজীবনের আবেগষষ্ঠী তৎপুরুষ

উদ্ধত-শিরউদ্ধত শির যারবহুব্রীহি

সিন্ধু-নীরসিন্ধুর নীরষষ্ঠী তৎপুরুষ

যৌবন-বেগযৌবনের বেগষষ্ঠী তৎপুরুষ

মরু-কবিমরুর কবিষষ্ঠী তৎপুরুষ

বিপ্লব-অভিযানবিপ্লব ও অভিযানদ্বন্দ্ব

গরল-পিয়ালাগরলের পিয়ালাষষ্ঠী তৎপুরুষ

গিরি-নিঃস্রাবগিরি হতে নিঃসৃত যাবহুব্রীহি

কূপমণ্ডুককূপের মণ্ডুকষষ্ঠী তৎপুরুষ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url