বাংলা ব্যাকরণ | বাগধারার বৈশিষ্ট্য ও গঠন
বাগধারা ভাষায় বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয় বলে বাগধারা ভাষাকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলে। বাগধারা বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। বাগধারার আছে আলাদা প্রকাশভঙ্গি। বাক্যরীতি থেকে বাগভঙ্গি, সব ক্ষেত্রেই এর নিজস্ব শৈলী। যে শব্দ বা শব্দগুচ্ছ দিয়ে বিশেষ অর্থ প্রকাশ পায় তাকে বাগধারা বলে। বাগধারায় এমন একটি শক্তি আছে যা সাধারণ অর্থে বোঝা যাবে না। যেমন: ‘গোবরগণেশ, বিড়ালতপস্বী, গোবরে পদ্মফুল, ঘোড়ার ডিম, কই মাছের প্রাণ। বাগধারা তিন প্রকারে ভাব প্রকাশ করে থাকে। যেমন:
১. বাচ্যার্থ: শব্দের মুখ্য অর্থকে বাচ্যার্থ বলে। যেমন: ঈশ্বর, নদী, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি।
২. লক্ষ্যার্থ: যখন কোন শব্দ মুখ্য অর্থ ছাড়া অন্য অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে লক্ষ্যার্থ বলে। যেমন: ‘গোপালের লেখাপড়ার গা নাই’। (গাত্র>গা) ‘গা’ শব্দের মুখ্য হলো দেহ’ কিন্তু এখানে বাচ্যার্থে বা মুখ্যার্থে ব্যবহৃত না হয়ে লক্ষ্যার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই বাক্যে ‘গা’ শব্দের লক্ষ্যার্থ হলো ‘ইচ্ছা’।
৩. ব্যাঙ্গ্যার্থ: যখন কোনো শব্দ বা শব্দসমষ্টি বাচ্যার্থ বা লক্ষ্যার্থ প্রকাশ না করে অন্য একটি নতুন গভীর ব্যঞ্জনাপূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে ব্যাঙ্গ্যার্থ বলে। যেমন: ‘রমেশ বাবুর ছেলে একটা অকালকুষ্মাণ্ড।’ ‘অকাল-কুষ্মাণ্ডের’ ব্যাঙ্গ্যার্থ হলো ‘অপদার্থ’।
সুতরাং লক্ষ্যার্থ ও ব্যাঙ্গার্থযুক্ত শব্দ বা শব্দসমষ্টি অথবা বাক্যাংশকে বাগধারা বলে।
বাগধারা ও প্রবাদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
বাগধারা ও প্রবাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন :
১. যে শব্দ বা শব্দগুচ্ছ দিয়ে বিশেষ অর্থ প্রকাশ পায় তাকে বাগধারা বলে। আর বিশেষ অর্থে প্রকাশিত উক্তি বা কথনকে প্রবাদ বলে।
২. বাগধারা লোকমুখ হতে সৃষ্টি হয়েছে। আর প্রবাদ চিন্তাশীল ব্যক্তি ও লেখক হতে সৃষ্টি হয়েছে।
৩. বাগধারা জনপ্রিয় বা ছন্দবদ্ধ উক্তি নয়। আর প্রবাদ জনপ্রিয় বা ছন্দবদ্ধ উক্তি।
৪. বাগধারা হলো অলংকারহীন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ। আর প্রবাদ হলো অলংকারসমৃদ্ধ সংক্ষিপ্ত বাক্য।
৫. বাগধারায় পুরো বুদ্ধির ছাপ নাই। আর প্রবাদে পুরো বুদ্ধির ছাপ আছে।
৬. বাগধারার অর্থ অতি সহজে বুঝা যায় না তাই এটি একটু জটিল। আর প্রবাদের অর্থ অতি সহজে বুঝা যায় তাই এটি সহজ সরল, ছন্দবদ্ধ, মিলেবদ্ধ, স্পষ্ট হয়।
বাগধারা গঠন
বিভিন্নভাবে বাগধারা গঠিত হতে পারে। যেমন:
১. বিশেষ্য + বিশেষ্য=গোবর গণেশ
২. বিশেষ্য + বিশেষণ=বকধার্মিক
৩. একাধিক বিশেষ্য + বিশেষণ=কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা, এক ঢিলে দুই পাখি মারা
৪. দ্বিত্বক্রিয়া (আ/ই-প্রত্যয় যোগে)=মাখামাখি, নাচানাচি
৫. ক্রিয়া বিশেষণযোগে=গলায় গলায় ভাব