বাংলা ব্যাকরণ | ধাতু
ক্রিয়ার মূল কিংবা এর যে অবিভাজ্য অংশ এর অন্তর্নিহিত মূল ভাবটির দ্যোতনা (দ্যোতনা=সূচনা, প্রকাশনা) করে, অথবা বিশ্লেষণ করা যায় না এ রকম যে ক্ষুদ্রতম ধ্বনি-সমষ্টি ক্রিয়ার বস্তু বা গুণ বা অবস্থান বুঝায় তাকে ধাতু বলে। যেমন- 'করা' ক্রিয়ার মূল 'কর্' একটি ধাতু।
ধাতুর প্রকারভেদ
ধাতু প্রধানত তিন প্রকার।
মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু
যে সকল ধাতু বিশ্লেষণ করলে কোন প্রত্যয় পাওয়া যায় না বা যারা সয়ংসিদ্ধ ধাতু, তাদেরকে মৌলিক ধাতু কিংবা সিদ্ধ ধাতু বলে। যেমন- √কর্, √চল, √দেখ্।
সাধিত ধাতু
কোন মৌলিক ধাতু কিংবা নাম শব্দের সাথে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে। যেমন- √কর + আ = √করা, √দেখ্ + আ = √দেখা।
সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু
বিশেষ্য, বিশেষণ ইত্যাদির সাথে যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠন করে তাকে সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু বলে। যেমন- পূজা কর্, রাজি হ, কষ্ট পা, শাস্তি দে।
অন্যান্য ধাতুসমূহ
নাম ধাতু
নাম শব্দ অথ্যাৎ বিশেষ্য, বিশেষণ, অব্যয় প্রভৃতি শব্দ কখনও কখনও প্রত্যয়যোগে, কখনওবা প্রত্যয় যুক্ত না হয়ে ক্রিয়ারূপে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের ক্রিয়ার মূলকে নাম ধাতু বলে। যেমন- জুতা > জুতানো, বেত > বেতানো, হাত > হাতানো, বাঁকা>বাঁকানো।
ণিজন্ত বা প্রযোজক ধা
মৌলিক ধাতুর সাথে 'আ' বা 'ওয়া' যুক্ত হয়ে ণিজন্ত বা প্রযোজন ধাতু গঠিত হয়। এটা এক ধরনের সাধিত ধাতু। যেমন- √কর + আ =করা। ''যা কিছু হারায় গিন্নী বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর।'', এখানে ''হারায়'' হল প্রযোজক ধাতু।
ধ্বন্যাত্মক ধাতু
ধাতুরূপে ব্যবহৃত অনুকার (অনুকার = সাদৃশ্যকরণ, অনুকরণ) ধ্বনিকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে। যেমন- ফোঁসা, হাঁপা, মচ্মচা, টল্টলা।
নঞ্র্থক ধাতু
'অস্তি' বাচক 'হ' ধাতুর পূর্বে নঞ্র্থক 'ন' শব্দের যোগে গঠিত 'নহ্' ধাতুকে নঞ্র্থক ধাতু বলে। যেমন- নহি, নই, নহ, নও, নহে, নয়।
প্রকৃতি
শব্দ বা ধাতুর মূলকে প্রকৃতি বলে। শব্দের মূল বলতে মৌলিক শব্দকে এবং ধাতুর মূল বলতে সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতুকেই সাধারণত বুঝায়। যেমন- 'দোকান' শব্দের মূল 'দোকান', 'ঢাকা' শব্দের মূল 'ঢাকা' এবং √লিখ ধাতুর মূল 'লিখ্', √কর ধাতুর মূল 'কর,'।
প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা-
নাম-প্রকৃতি
শব্দের মূলকে নাম-প্রকৃতি বলে। নাম-প্রকৃতির আগে বা পরে কিছু যোগ না করলেও এইগলো শব্দ বলে গণ্য হয়। তবুও বাক্যে ব্যবহার করতে গেলে এ নাম-প্রকৃতির সাথে বিভক্তি চিহ্ন যোগ করতে হয়। যেমন- ঢাকা, দোকান।
ক্রিয়া-প্রকৃতি
ধাতুর মূলকে ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি বলে । ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি প্রত্যয় বা বিভক্তিযুক্ত না হয়ে শব্দরূপে ব্যবহৃত হয় না । যে সমস্ত ধাতু শব্দরূপে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় , সেগুলোতে একটি শূন্য প্রত্যয় যুক্ত আছে ব'লে ধ'রে নেওয়া হয় । যেমন: লিখ্, কর্ ।
বাঙলার ২০ ধাতুগণ
১. হ ২. খা ৩. দি>দে ৪. শু ৫. কর ৬. কমা ৭. কাট ৮. ছটফটা ৯. লিখ>লেখ>শেখ ১০. উঠ ১১. লাফা ১২. সেব ১৩. ফিরা>বেড়া ১৪. ঘুরা ১৫. ধোয়া ১৬. দৌড়া ১৭. চটকা ১৮. বিগড়া ১৯. উলটা ২০. ছোবলা
প্রাতিপাদিক
বিভক্তিহীন নাম-প্রকৃতি বা সাধিত শব্দকে এবং বিভক্তিহীন অথচ প্রত্যয়যুক্ত ধাতু বা ক্রিয়া-প্রকৃতিকে প্রাতিপাদিক বলে। সংক্ষেপে বল্লে, প্রকৃতির সাথে প্রত্যয়ের যোগে যে শব্দ বা ধাতু গঠিত হয় তার নাম প্রাতিপাদিক। 'প্রাতিপাদিক' মানে যা দিয়ে শুরু করা হয়।
নাম-প্রাতিপাদিক
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়হীন কংবা বিভক্তিহীন অথচ প্রত্যয়যুক্ত নাম-প্রকৃতিকে নাম প্রাতিপাদিক বলে। যেমন- দোকান + দার = দোকানদার + কে = দোকানদারকে
ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়যুক্ত ধাতু-প্রকৃতিকে ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক বলে। যেমন- কর্ + অ = করা + কে = করাকে